শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গৌ জয়তঃ



গুরুমহিমা - স্বপ্রতিষ্ঠার তরে

একরূপ - সচ্চিদানন্দম​য়
শ্রীশ্রীমন্মহাপ্রভুর অন্তরঙ্গ​ পার্ষদ​ স্ব​য়ং শ্রীল সনাতন গোস্বামিপাদ তাঁহার শ্রীশ্রীবৃহ​ৎভাগবতামৃতম্ গ্রন্থে ২।২।২১৬ শ্লোকের নিজকৃত-​ভাষ্যে লিখিয়াছেন -
“যদ্যপি সচ্চিদানন্দদেহবতাং ভক্তানাং স্বস্য চ সচ্চিদানন্দঘনস্য সদৈকরূপত্বেন বিচিত্রভেদো ন সম্ভবেদেব​, তথাপি ভক্তবাৎসল্যেন ভক্তানাং পরমমহাসুখবিশেষস্য সম্পত্তয়ে নিজমহাশক্তি-বিশেষেণ তথা তথা সম্পাদ​য়তীতি॥”

ভাষ্যের অর্থ -
যদ্যপি শ্রীভগবান সচ্চিদানন্দঘনবিগ্রহ এবং তাঁহার ভক্তসকলও সেই সচ্চিদানন্দম​য় বলিয়া একরূপ​, কখনও বিচিত্র​-ভেদ সম্ভব হইতে পারে না; তথাপি ভক্তিবাৎসল্যস্বভাববশতঃ স্বীয় ভক্তসকলকে পরমমহাসুখবিশেষ প্রদানের জন্যই তাদৃশ নিজমহাশক্তিবিশেষ প্রকটন করিয়া সুখসম্পত্তি বিতরণ করিয়া থাকেন।

শ্রীহনুমানজীউ এবং শ্রীজাম্ববানজীউ
শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের পার্ষদগণ, যেরূপ শ্রীহনুমানজী তথা শ্রীজাম্ববানজী। এই দুই মহাভাগবতের মধ্যে কোনও ভেদ নাই। তাঁহারা একরূপ​। তথাপি লীলা বৈচিত্র্যের জন্য এক সচ্চিদানন্দরূপ - দুই রূপ প্রকটন করিয়া অশেষ​-বিশেষে নানা-প্রকরণে প্রভু শ্রীরামচন্দ্রের সেবা করিয়াছেন।

কোনও সাধক জীব উপরি-উক্ত তত্ত্বজ্ঞানের অভাবহেতু, যদি শ্রীহনুমানজীউর লঙ্কা-দহন-আদি সেবাসৌষ্ঠবকে মায়িক কল্পনা করিয়া, শ্রীজাম্ববানজীউ অপেক্ষা তাঁহাকে অধিকতর-শ্রেষ্ঠরূপে মহিমান্বিত করিবার প্রচেষ্টায় শ্রীহনুমানজীর অভিন্নরূপ শ্রীজাম্ববানজীউর প্রতি অবমাননা করেন​, তাহা হইলে সেই তথাকথিত (অপ্রকৃত​) সেবক-অভিমানী সাধক জীবের শ্রীহনুমানজীর শ্রীচরণেই মহা-অপরাধ সঙ্ঘটিত হইবে। অপরপক্ষে কোনও সাধক শ্রীজাম্ববানের শ্রীমতীললিতাদেবীর জীবনরক্ষা তথা জাম্ববতীর পালক​-পিতা-চরিত্রে শ্রীহরির শ্রীদ্বারকালীলায় অংশগ্রহণ দর্শাইয়া শ্রীহনুমান প্রভুকে শ্রীজাম্ববানজীউ অপেক্ষা হেয় জ্ঞান করিলে এক-সচ্চিদানন্দরূপ-পার্ষদ-মহাভাগবত শ্রীজাম্ববানজীর শ্রীচরণে অপরাধী হইবেন​। মহাভাগবত বৈষ্ণব​-শিরোমণিগণ একরূপ​। অধিকন্তু, ভক্ত​-ভাগবতগণ ও শ্রীভগবান সচ্চিদানন্দঘনবিগ্রহ। নিজমহাশক্তিবিশেষ প্রকটন করিয়া সুখসম্পত্তি বিতরণ করিবার জন্যই বিভিন্নরূপ ধারণ করেন।

শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্যপ্রভুর ​প্রতিজ্ঞা

যদি তোরে না মানিয়া মোরে ভক্তি করে।
সেই মোর ভক্তি তবে তাহারে সংহারে॥
...
যদি মোর পুত্র হ​য়​, হ​য় বা কিঙ্কর​।
‘বৈষ্ণবাপরাধী’ মুঞি না দেখোঁ গোচর​॥

শ্রীচৈতন্যভাগবত - মধ্য​/১৯/১৭২,১৭৫


ভক্তিই ত্যাজ্যের সংহার-কারণ
প্রভুপাদ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর এই শ্লোকরত্নের ব্যাখ্যা-বিস্তার করিয়া শ্রীগৌড়ীয়ভাষ্যে লিখিলেন -
অদ্বৈত বলিলেন, - ‘হে প্রভো বিশ্বম্ভর​, তোমার সেবা পরিত্যাগ করিয়া আমার শিষ্যনাম​-ধারী ও অধস্তন পুত্রগণ যদি আমার সেবা করিবার জন্য ব্যগ্র হ​য়​, তাহা হইলে তাহাদের তাদৃশী ভক্তি তাহাদিগকে সংহার করুক​, - ইহাই আমার প্রতিজ্ঞা।’ (১৭২)

শ্রীঅদ্বৈত​-প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী সফল হইয়াছে। শ্রীঅদ্বৈত​-প্রভুর অন্তরঙ্গ শিষ্য ও অধস্তন সকলেই পণ্ডিত গদাধরের আনুগত্য স্বীকার করিয়াছেন। অদ্বৈত্যের বিরোধী পুত্র ও শিষ্যগণ গদাধর পণ্ডিত গোস্বামীর বিচার গ্রহণ করেন নাই ও তাঁহাকে শ্রীগুরুপাদপদ্ম বলিয়া জানিতে পারেন নাই। (১৭৩)

নিজ নির্ব্বুদ্ধিতা-ক্রমে বিষ্ণুবংশ হইবার অবৈধ চেষ্টা করিলে ত্যাজ্য বংশ ও শিষ্য​-পরিচ​য়​-মাত্র অবশিষ্ট থাকে।… যে ব্যক্তি বিষ​য়​-বিগ্রহ শ্রীচৈতন্যদেবের সেবা পরিত্যাগ করিয়া স্বীয় অপস্বার্থ​-পোষণের জন্য অদ্বৈত​-মহিমা নিযুক্ত করেন​, তিনি ভগবানের অনুগ্রহ​-লাভে চিরদিন বঞ্চিত হইয়া আত্মম্ভরী, দাম্ভিক ও প্রতিষ্ঠাশাপরায়ণ হন​।… (১৭৪)

শ্রীঅদ্বৈতের ৩ পুত্র ও কতিপ​য় শিষ্যব্রুব শ্রীচৈতন্যদেব ও তাঁহার শুদ্ধদাসগণের সহিত সঙ্গ ও কৃপা বিচ্ছিন্ন করেন, ইহা শ্রীঅদ্বৈত প্রভুর উক্তি হইতেই জানা যায়।… (১৭৫)

শ্রীগৌড়ীয় গোষ্ঠীপতি শ্রীশ্রীগৌরসরস্বতী

শ্রীগৌড়ীয় গোষ্ঠীপতি শ্রীশ্রীগৌরসরস্বতী প্রভুপাদ



একমাত্র​ তাঁহার গুরু
বর্তমানে শুদ্ধাভক্তি ও ভক্ত​-ভাগবত তথা গুরু-তত্ত্ব​-সম্বন্ধ-জ্ঞানহীন কিছু ব্যক্তি গৌড়ীয়​-আচার্য্যবর্য্য শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুরের শ্রীচরণাশ্র​য়কারী দশম অধস্তন আচার্য্যবৃন্দের প্রতি যে প্রকার অবমাননার অবাহন করিয়াছেন ও করিতেছেন - তাহা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক​। প্রত্যেকেই নিজ নিজ প্রতিষ্ঠা-অর্জনের উদ্দেশ্যে স্বীয় দীক্ষাগুরু তথা আচার্য্যের প্রতি অধিক সম্মান-প্রচারের অভিনয় করিতেছেন।
যেমন -

  • তাঁহার গুরুই কেবলমাত্র নিত্য​সিদ্ধ​ মহাত্মা - অন্যেরা সাধন​-সিদ্ধ অথবা সাধনহীন​, এমনকি কেহ কেহ​ সাধন​-চ্যুত।
  • অথবা, তাঁহার গুরুই একমাত্র সফল প্রচারক​ - অপর সকল আচার্য্যই প্রচারাদি কার্য্যে ব্যর্থ।
  • তাঁহার গুরু একমাত্র বিশুদ্ধ​ শিষ্য​। অপর সকলেই গুরু-কর্তৃক পরিত্যক্ত।
  • তাঁহার গুরু আন্তর্জাতিক-মানের। অন্য সকলে আঞ্চলিক।
  • কোথাও বা, তাঁহার গুরুই শ্রীল প্রভুপাদের একমাত্র প্রিয়তম শিষ্য। যখন আর কেহ সেইরূপ প্রিয়তা অর্জন করিতে পারেন নাই, অত​এব সেই প্রিয়তমের শিষ্য অহং - আমাকে আর দেখে কে!
  • তাঁহার গুরু ব্যতিরেকে অপর কেহই ত নিত্যস্বরূপ প্রাপ্ত হয়েন নাই!
  • তাঁহার গুরুই একমাত্র ‘গোস্বামী’-পদবাচ্য​, অপর কেহ নহেন​। যেন​ আর​ কেহই ষ​ড়বেগজ​য়ী নহেন, অত​এব নিশ্চ​য়ই গোদাস।
  • আবির্ভাব একমাত্র​ তাঁহার গুরুরই হইয়াছিল​, অপর​ সকলেরই প্রাকৃত শৌক্র​-জন্ম, অত​এব আর কেহই ‘আবির্ভূত’ হয়েন নাই।​
  • তাঁহার গুরুরই একমাত্র ‘তিরোভাব’ হইয়াছিল​, অপর সকলেই সাধনসিদ্ধ বলিয়া নির্যান-দশা প্রাপ্ত হইয়াছেন।
  • তাঁহার গুরুই এক​মাত্র আচার্য্যপদে অধিকারী, অপর সকলে ‘গুরুগিরি’ করিলেও কিন্তু ‘আচার্য্য’ নহেন।
  • তাঁহার গুরুই ত একমাত্র পারমার্থিক বৈষ্ণব বংশ রক্ষা করিয়াছেন, অপর কোন আচার্য্যের পরম্পরা নাই বা হইতে পারে না।
  • অন্যান্য দশম-অধস্তন আচার্য্যগণ অপেক্ষা তাঁহার গুরুর দানই সর্বাধিক।
  • তাঁহার গুরু ব্রাহ্মণকুলে আবির্ভূত হইয়াছিলেন, অপর অনেক আচার্য্য কিন্তু অব্রাহ্মণ।
  • তাঁহার গুরু ব্রাহ্মণকুলোদ্ভূত​, অত​এব 'দেবগোস্বামী'। ব্রাহ্মণেতর কুলে অপর সকলে গোস্বামী-পদবাচ্য।
  • ইত্যাদি অপরাধ​, ইত্যাদি।


হে সারস্বত দশম​-অধস্তন আচার্য্যবৃন্দ! আপনারা সকলেই শ্রীগৌর​-সরস্বতী শ্রীল প্রভুপাদের স্নেহধন্য ও ত​ৎপ্রেষ্ঠমূর্ত্তি​! হে পরমপূজ্য জগদ্গুরুগণ, আপনারা এক সচ্চিদানন্দরূপ​-স্বরূপ, লীলাকার্য্যে অচিন্ত্যভেদাভেদ-তত্ত্বে অভিন্ন তথা বিভিন্ন মূর্ত্তিধারী​! হায়! এই জগতের বদ্ধ জীব​ আমরা! কেবল​ এই কার্য্যটিই আমরা করিব!​ অপরাধ, অধিক অপরাধ​, অধিকতর অপরাধ​, কেবলমাত্র অপরাধ​! আপনাদের শ্রীচরণে অপরাধ বিনা অন্য কিছুই করিব না!​

ভেদ ও অভেদ - অচিন্ত্য
অচিন্ত্যভেদাভেদ সিদ্ধান্ত অনুসারে, গুরুদেবের গুরুভ্রাতাগণ তত্ত্বতঃ একই রূপ​। অত​এব​, অভেদ। অন্যদিকে সেবাবৈচিত্র্যে তথা সেবা-বৃত্তি-জনিত-রসগত-কারণে আপাতঃ ভেদ বিদ্যমান। সুতরাং তাঁহারা বিভিন্ন রূপধারী। এই ভেদ এবং অভেদ অচিন্ত্য​। এই কারণে এই তত্ত্ব​ ভজনশীল ব্যতিরেকে সাধারণের অগম্য। বদ্ধজীবের এইজগতে ভজনশীল স্নিগ্ধ শিষ্যের অপ্রতুলতা-হেতু, অধিকাংশ তথাকথিত প্রাকৃতভক্ত বা ভক্তব্রুবগণ এই ভেদ ও অভেদ অনুধাবন করিতে পারেন না। দুর্ভাগ্যবশতঃ অধিকাংশক্ষেত্রেই দেখা যায় শিষ্য তাঁহার গুরুর অধিক মর্য্যাদা স্থাপন করিতে গিয়া, গুরুর অভিন্ন রূপকে বহুপ্রকারে অবমাননা করিয়া, স্বীয়​ দীক্ষাগুরুকে শ্রেষ্ঠ আচার্য্য এবং আপনাকে শ্রেষ্ঠ শিষ্যরূপে জাহির করিয়া থাকেন।

উলূকগণের গুর্ব্ববজ্ঞা
দুর্ভাগ্যক্রমে এই সকল প্রতিষ্ঠাপরায়ণ অতত্ত্বজ্ঞ ব্যক্তিগণ আপাত​-অর্থে স্ব​-গুরু-মহিমা-স্থাপনকারীরূপে জগতের বহির্ম্মুখ জনগণের নিকটে প্রতিভাত হইলেও, তাঁহাদের তথাকথিত স্ব​-স্ব-গুরুভক্তিরূপ ভাবনাটি ছন্ন-রূপে তাঁহাদের প্রতিষ্ঠা অর্জনের উপায়। কেহ শ্রীজাম্ববানজীর প্রতি অবমাননা​-উদ্দেশ্যে শ্রীহনুমানজীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের আছিলায় নিজ প্রতিষ্ঠা-সংগ্রহে ব্যস্ত এবং এই দুই অভিন্ন পার্ষদ​-বিগ্রহের শ্রীচরণে অপরাধী, চির-বঞ্চিত, আত্মম্ভরী, দাম্ভিক ও প্রতিষ্ঠাশাপরায়ণ।

এক আচার্য্যের সম্মান করিয়া অপর অভিন্ন আচার্য্যকে তাচ্ছিল্য করিলে এক সচ্চিদানন্দরূপ​ স্ব​-গুরুর শ্রীচরণেই অপরাধ সংঘটিত হইয়া থাকে। ইহা কেবল অপর আচার্য্যরূপী মহাবৈষ্ণবের শ্রীচরণে বৈষ্ণব​-অপরাধ ন​য়​, এইটি স্বীয় গুরুর শ্রীচরণ তথা গুরুতত্ত্ব-লঙ্ঘন​-জনিত​ গুর্ব্ববজ্ঞা-নামক অপরাধ​।


কৃপাবিচ্ছিন্ন​ শিষ্যব্রুব
শিষ্যব্রুবগণ যে আচার্য্যপ্রভু কর্তৃক পরিত্যক্ত তাহার প্রমাণ এই যে তাঁহারা শ্রীল পণ্ডিত গোস্বামীপ্রভুকে গুরুতত্ত্ব-রূপে চিনিতে পারেন নাই এবং তৎকৃপা-বঞ্চিত​। অর্থাৎ শ্রীল অদ্বৈতপ্রভুর কৃপাবঞ্চিত না হইলে তাঁহারা শ্রীল গদাধর পণ্ডিত গোস্বামী কে গুরুতত্ত্বরূপে চিনিতে পারিতেন। অনুরূপে, শ্রীগৌরসরস্বতী প্রভুপাদের কৃপাধন্য দশম অধস্তন আচার্য্যগণকে যিনি অভিন্ন গুরুতত্ত্ব রূপে চিনিতে পারিয়াছেন​, তিনি তাঁহার দীক্ষাগুরুর প্রকৃত কৃপা প্রাপ্ত হ​ইয়াছেন। যিনি দশম অধস্তন আচার্য্যবৃন্দকে স্বীয় দীক্ষাগুরুর অভিন্ন​ আর এক বিশেষ রূপ বলিয়া জানিতে পারেন নাই, তাঁহার সেই গুরুমূর্তি দর্শনের অনধিকার - স্ব​-গুরু-কর্তৃক পরিত্যাগের ফলস্বরূপ​।

অপরপক্ষে ইহাও সিদ্ধ - যে শিষ্যব্রুব পুত্রগণ শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্য প্রভুর চরণাশ্রয়ের অভিন​য় করিয়াও, শ্রীল গদাধর পণ্ডিত গোস্বামীকে গুরুর অভিন্নরূপে সম্মান করেন নাই, তাঁহারা কেবল শ্রীগদাধর প্রভুর কৃপা হইতে বঞ্চিত হইয়াছেন তাহাই নহে, তাঁহারা আচার্য্য শ্রীঅদ্বৈত ঠাকুরের দ্বারাও পরিত্যক্ত​। সেইরূপ প্রভুপাদ শ্রীল সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুরের কোনও এক গণের শিষ্যত্ব পাইয়াও, যে কেহ অপর কোনও দশম অধস্তন আচার্য্যের শ্রীচরণে স্বল্পতমও অবজ্ঞা করিয়াছেন, তিনি কি তাঁহার গুরুপাদপদ্মের নিষ্কপট কৃপাভাজন হইয়াছেন?

শ্রীগৌর​-অদ্বৈতের অনুগত গৌড়ীয় গুরুবর্গগণ তাদৃশ উলূকপ্রতিম - শাস্ত্রবিচারহীন, শিষ্যব্রুব ও অভিন্ন​-গুরুবৈষ্ণবগণের শ্রীচরণে ভেদ-দর্শনকারী অপরাধীদিগকে শ্রীঅদ্বৈতাচার্য্যের সুনীতি ও প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী ত্যাজ্য ও কৃপা-বিচ্ছিন্ন করিয়া থাকেন। শ্রীহরির বহিরঙ্গা মায়াশক্তি আপাত-শাস্তি-স্বরূপ​ লাভ​-পূজা-প্রতিষ্ঠায় বন্ধন করিয়া রাখিয়াছেন মাত্র​, কিন্তু অদূরভবিষ্যতে এই সকল গুর্ব্ববজ্ঞাকারী ও বৈষ্ণব-​অপরাধী এই বহিরঙ্গা শক্তির বিচারেই অবশ্যই নির​য়গামী। শ্রীল অদ্বৈতাচার্য্যের বাক্যানুসারে কিন্তু শিষ্যব্রুবের ছন্ন​-স্বগুরু-ভক্তিটিই সেই অপরাধীর সংহারের কারণ​।

স্নিগ্ধশিষ্যের গুরুদর্শন
সৌভাগ্যের বিষ​য় এই যে, সদা-প্রবাহিতা শুদ্ধ-রূপানুগ-ভক্তিবিনোদ-সারস্বত​-ধারায় সুস্নাত ও তত্ত্বজ্ঞ অকিঞ্চন অনেক​ ভক্ত এই ধরাধামে বাস করিয়া ভজন-অনুষ্ঠান করিতেছেন। তাঁহারাই শ্রীঅদ্বৈতাচার্য্য প্রভুর প্রকৃত শিষ্য - শ্রীঅদ্বৈত​-গদাধরে অভেদ-দর্শনকারী শ্রীঅচ্যুতানন্দের মার্গানুগমনকারী। প্রায়শঃই তাঁহাদের শ্রীমুখে শুনিয়াছি - এই দশম অধস্ত​ন আচার্য্যবর্গ​ - কেহই বস্তুতঃ কোনও প্রকারে ভিন্ন নহেন, কিন্তু একই সচ্চিদানন্দরূপ​। সকলেই গৌড়ীয়গোষ্ঠীপতি শ্রীগৌর​-সরস্বতী শ্রীল প্রভুপাদের বিশেষ বিশেষ কৃপা-ভাজন ও স্নেহবিগ্রহাস্পদ​​। পরমবুদ্ধিমান সরল ভজনপরায়ণ​ সাধুগণ দশম অধস্তন সকল আচার্য্যগণকে স্বীয় গুরুপাদপদ্মের অভিন্ন রূপ​ জানিয়া নিত্যই পতিতপাবন শ্রীগুরুমূর্তিরূপে সম্বোধন​ ও পূজন করিয়া থাকেন।


দীনের প্রার্থনা
পৃথিবীদেবীর আদরের মুকুটমণি এই স্নিগ্ধ দশম অধস্তন​ গৌড়ীয়বৈষ্ণবাচার্য্য​কুল অযাচিত দয়া-প্রদর্শন করতঃ পূর্বোক্ত উলূক-অভাগাদিগের চক্ষুরূন্মীলন করিয়া, ভক্ত​-ভাগবতগণ যে সকলেই একই সচ্চিদানন্দ রূপ - শ্রীল সনাতন গোস্বামীপাদ-বর্ণিত​ এই শাস্ত্র​-সিদ্ধান্তে শ্রদ্ধা আন​য়ন-পূর্বক​ তাঁহাদের ও জগতের মঙ্গল​-বিধান করুন - এই প্রার্থনা করি।

হায়​! তত্ত্বজ্ঞান-দৃষ্টি-হীন গুরুবৈষ্ণব-চরণে অপরাধী, অজ্ঞান-তিমির-অধিবাসী উলূক-প্রতিমগণ! অহো! আপনারা ত মহাভাগ্য প্রাপ্ত হইয়াছিলেন! আপনারা প্রভুপাদের গণের শ্রীচরণের দর্শন এবং আশ্র​য় পাইয়াছিলেন​। জগতের কোন্ বস্তুর জন্য লালায়িত হইয়া সেই অমূল্য রত্ন পাইয়াও হারাইবার জন্য বদ্ধ​-প্রতিজ্ঞ হইলেন? শ্রীরূপানুগগণ শ্রীরূপের শ্রীচরণ ত্যাগ করিয়া গুর্ব্ববজ্ঞা-রূপ-ভ​য়ঙ্কর-অপরাধ-​অনুষ্ঠান-দ্বারা পুনঃ জ​ড়প্রতিষ্ঠার সাধন করেন না। সাবধান হৌন! শ্রীনিত্যানন্দচরণ দশম​-অধস্তন আচার্য্যবৃন্দের শ্রীপদকমলে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তাঁহারা কৃপাম​য় ও মহাসামর্থ্যবান! প্রতিষ্ঠাবিষ্ঠা হইতে উদ্ধার করিয়া অবশ্যই শুদ্ধাভক্তি প্রদান করিবেন। সেই সেই আচার্য্যরত্ন​ সম্বন্ধে বেদ-পুরাণাদি নিয়তঃই তারস্বরে যে গীতি গাহিতেছেন তাহা কি কোনওদিন শুনেন নাই ? “ব্রহ্মান্ড তারিতে শক্তি ধরে জনে জনে।”


More